কিভাবে শিশুদের গল্প বলে শোনান উচিত!

Shape Image One
কিভাবে শিশুদের গল্প বলে শোনান উচিত!

আমরা ধারাবাহিক ভাবে জানবার চেষ্টা করছিলাম শিশুদের নিয়মিত গল্প বলবার সুফল এবং গুরুত্ব সম্পর্কে। কিন্তু শুধু গল্প বলে গেলেই কি হবে? গল্পটি সুন্দর ভাবে শিশুর কাছে পৌছানোর বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। কোন ভাল গল্পও ভুল উপস্থাপনার কারনে শিশুর কাছে বিরক্তির কারন হতে পারে। তাই কিভাবে শিশুদের গল্প বলে শোনান উচিত তা নিয়ে ৭ টি টিপস শেয়ার করছি আজ-

১. গল্পের দৈর্ঘ্য

শিশুদের জন্য নির্বাচিত গল্পগুলো বেশি লম্বা হওয়া উচিত নয়। আবার এত ছোটও হওয়া উচিত নয় যেন শিশু সেই গল্পের আবহে প্রবেশ করার আগেই গল্পটি শেষ হয়ে যায়। সাধারনত ৩ থেকে ৫ মিনিট সময় লাগবে এমন গল্প বাচ্চাদের বলে শোনান যেতে পারে। বাচ্চাদের উপযোগী বই গুলোতে গল্পগুলো সেভাবেই তৈরী করা হয়। বাবা মা নিজে থেকে তাদের কোন শোনা কিংবা অভিজ্ঞতার গল্প শেয়ার করার সময়ও সময়ের এই বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত। তবে শিশু ভেদে তাদের ধৈর্যের সীমাও ভিন্ন হয়। তাই প্রতিটি বাচ্চার ধৈর্যের বিচারে বাবা মাকে তাদের জন্য উপযোগী গল্পের দৈর্ঘ্য নির্ধারন করতে হবে।

২. আরামদায়ক পরিবেশ

শিশুকে গল্প বলে শোনানোর আগে একটি আরামদায়ক স্থান এবং পরিবেশ নির্বাচন করুন। বাবা মা যদি তার সন্তানকে ঘুমোতে যাবার আগে বিছানায় এক সাথে শুয়ে একটি গল্প বলতে পারে সেটা একটি অসাধারন পরিবেশের জন্ম দেয়। এছাড়াও বসেও গল্প বলা যেতে পারে। তবে শিশুদের জন্য দাঁড়িয়ে কিংবা হাটতে হাটতে গল্প বলাটা খুব কার্যকর হয় না। মনে রাখতে হবে চারপাশের পরিবেশ এমন হওয়া উচিত নয় যাতে শিশুর গল্প শোনার ক্ষেত্রে মনোযোগে বাধা সৃষ্টি করে। কোন শব্দ বা মনোযোগ আকর্ষন করে এমন কিছুর সামনে গল্প বলাটা কার্যকর নাও হতে পারে।

৩. একটি সুন্দর সূচনা

গল্প শুরু করার আগে শিশুর যেন গল্পটির প্রতি একটি আকর্ষন তৈরী হয় তার জন্য একটি ছোট্ট সূচনা দেয়া উচিত। যেমন কোন মহান ব্যাক্তির গল্প বলার ক্ষেত্রে খুব সংক্ষেপে তার পরিচয় দেয়া। আবার যদি কেউ তার স্মৃতি থেকে গল্প বলে তাহলে বলা যেতে পারে এই গল্পটা সে কোথায় শুনেছে, তিনি কে ছিলেন ইত্যাদি। এতে গল্পের সাথে সাথে ওই চরিত্রগুলোর সাথেও শিশুর পরিচয় হয়ে যায়।

৪. যথাযথ অভিব্যাক্তি/এক্সপ্রেশন

শিশুদের গল্প বলে শোনানোর সময় গল্পের সাথে সাথে যথাযথ অভিব্যাক্তি/এক্সপ্রেশন দেয়াটা খুবই জরুরী। গল্পের প্রয়োজনে ছোট খাট শব্দ যেমন কোন পশু পাখির ডাক, বাতাসের শব্দ, সমুদ্রের শব্দ ইত্যাদি যতটুকু পারা যায় মুখ দিয়ে করতে পারলে বাচ্চা গল্পের মধ্যে আরও ভাল ভাবে প্রবেশ করতে পারে। আনন্দ/দুঃখ/ভয় ইত্যাদির অভিব্যাক্তিগুলোও যতটুকু পারা যায় অভিনয় করে দেখাতে পারলে গল্পটি যথাযথ ভাবে শিশুর কাছে পৌছে যাবে।

৫. স্পষ্ট উচ্চারন এবং ধীর গতি

স্পষ্ট উচ্চারনে বাচ্চাদের গল্প পড়ে বা বলে শোনানো খুবই গুরুত্বপূর্ন বিষয়। এতে বাচ্চার গল্পটি বুঝতে সহজ হয় এবং বাচ্চার শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ হয় এবং ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আর গল্প বলার গতি হতে হবে ধীর। আবার এমন ধীরও নয় যেন বাচ্চা বোর হয়ে যায়।

৬. গল্পের সাথে শিশুদের সম্পৃক্ত করা

গল্প বলার সময় শুধু বলে গেলেই হবে না। বাচ্চাকে গল্পের সাথে সম্পৃক্তও করতে হবে। এ কাজটি করার জন্য, গল্প বলার সময় আপনার শিশুকে গল্প থেকেই প্রশ্ন করুন। তার উত্তর আপনাকে বলে দেবে সে বুঝতে পেরেছে কিনা। আবার গল্পের মধ্যে কোন পরিস্থিতি তৈরি হলে তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন এখন তুমি হলে কি করতে? তার উত্তর আপনাকে বলে দেবে সে কতটুকু ক্রিয়েটিভ স্বত্তা নিয়ে বেড়ে উঠছে। অনেক শিশু উত্তর দিতে চাইবে না। তাদের উদ্ভুদ্ধ করুন যাতে তারা উত্তর দেয়। এটা তার বিকাশে সাহায্য করবে।

৭. আপনি রিলাক্স থাকুন স্বাভাবিক ভাবে গল্পটি বলুন

কিভাবে বলব? বলতে পারব কিনা? আমার এক্সপ্রেশান আসে না? আমি গল্প বলতে পারি না এসব বলে অনেক বাবা মা রোজ রোজ গল্প বলার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইবেন। সন্তানের ভাল চাইলে নিয়মিত গল্প বলার এই অভ্যাসটি করা উচিত। সন্তানের বিকাশ এর পাশাপাশি চমৎকার এই অভিজ্ঞতাটুকু আপনার সন্তানকে দিতে কোন বাবা মায়ের পিছপা হওয়া উচিত নয়। আর আপনাকে ১০০ ভাগ প্রফেশনালিজমের সাথে গল্প বলতে হবে তা কিন্তু নয়। বলতে বলতে এক সময় আপনিও দক্ষ হয়ে উঠবেন। এ কাজটাতে আপনার নিজেরও আগ্রহ থাকতে হবে আর মনে রাখতে হবে আপনি যতটুকুই পারছেন ততটুকুই আপনার সন্তানের জন্য যথেষ্ট।