আপনি রোজ একটা বই হতে নিয়ে আপনার শিশুর ক গল্প পড়ে শোনান। কি অসাধারন একটা বিষয়। কিন্তু কখনও ভেবেছেন কি? আপনি যে গল্পগুলো বলছেন সেগুলো দীর্ঘমেয়াদে আপনার বাচ্চার উপর কোন চাপ কিংবা নেগেটিভ প্রভাব ফেলছে কিনা? অথবা সেই গল্পটি আপনার শিশুর উপযোগী কিনা?
গল্প বলে শোনান এবং শিশু বিকাশ এ নিয়ে আগের লেখারগুলোর সাথে আজ যোগ করছি শিশুদের জন্য কি ধরনের গল্প সিলেক্ট করা উচিত তা নিয়ে ৬ টি পয়েন্ট।
এক কথায় বললে বলা যেতে পারে ৩ বছরের বাচ্চাকে রোমিও জুলিয়েট এর গল্প শোনানোর কোন মানে হয় না। তাদের বয়স এবং বুদ্ধিমত্তা বিচার করেই গল্প বাছাই করতে হবে। এখন কিন্তু বাজারে বাচ্চাদের যে বই গুলো পাওয়া যায় তার মধ্যে বয়স উল্লেখ থাকে। অনেক সময় একই গল্প বিভিন্ন বয়সের উপযোগী করে ভার্সান করে প্রকাশ করা হয়। সেগুলো ফলো করা যেতে পারে। ছোটদের ক্ষেত্রে গল্পের দৈর্ঘ্য খুবই গুরুত্বপূর্ন। খেয়াল করুন আপনার শিশু কতক্ষন শুনতে অভ্যস্ত। আপনি সেই দৈর্ঘ্যরে গল্পগুলোই তাকে বলুন। গল্প বলার আগে নিজে একটু পড়ে দেখুন। গল্পের ভাষা নিয়ে একটু ভাবুন। কোন অবাঞ্চিত শব্দ আছে কিনা দেখুন। প্রয়োজনে নিজেই একটু সহজ ও ছোট করে নিন। আপনি নিজেও বুঝে ফেলবেন কোন গল্পটি আপনার শিশুর জন্য উপযোগী আর কোনটি নয়।
শুধু শুধু গল্পের ছলে বাচ্চাদের মধ্যে আজগুবি বিষয় বা ভয় ঢুকিয়ে দেবেন না দয়া করে। এমন অনেক ৩/৪ বছরের শিশুদের দেখা যায় যারা কথা বলা শিখে নি এখনও অথচ ভুত চেনে। ভয়ও পায়। ভুত তো দেখা যায় না তারমানে ঘরের কেউ গল্প বলে তার মাথায় ভুত ঢুকিয়েছে। এর প্রভাব সারা জীবন থাকবে। বিশ্বাস করুন বড় হবার পরও সে অল্প হলেও অশরীরীকে ভয় পাবে। এই ভয়কে খুব কম মানুষই জয় করতে পারে পরবর্তীতে। আবার এও দেখা যায়, এক মা তার বাচ্চাকে বলছে, খাও খাও নইলে পুলিশ আসবে। বাচ্চা আতংকিত হয়ে খেয়ে নিল। তারমানে যে কোন ভাবেই হোক তার মাথায় পুলিশের ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ পুলিশকে ছোট বেলা থেকেই সাহায্যকারী হিসেবে আমাদের উপস্থাপন করার দরকার ছিল। আজগুবি গল্পের বিষয়টা আরেকটু ক্লিয়ার করি। ধরুন একটি গল্পে এমন আছে যে, দুটি খরগোশ কথা বলছে আবার আরেকটি গল্পে এমন আছে যে, দুটি গেছো ভুতের বাচ্চা পা দুলিয়ে গল্প করছে। এই দুটি প্রেক্ষাপটই আপাতদৃষ্টিতে আজগুবি মনে হলেও প্রথমটি কিন্তু পুরোপুরি আজগুবি নয়। প্রানীরা তাদের জায়গা থেকে নিজেদের মধ্যে কমিউনিকেশান করে থাকে এবং শিশুদের এটা জানানোতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু দুটি গেছো ভুতের বাচ্চা গল্প করছে। এ যে আজগুবি তার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই।
আমরা যখন শিশুদের জন্য গল্প বাছাই করব চেষ্টা করা উচিত মহামানবদের জীবন থেকে সত্য ঘটনাগুলো নেয়ার। এতে ছোট বেলা থেকেই কোন মহান ব্যাক্তিকে শিশুটি চিনবে এবং আইডল করে নেবে। শিশু বড় হতে থাকবে আর সেই মহামানবকে আরও ভাল ভাবে চিনবে জানবে এবং নিজেও আলোকিত হবে। খেয়াল রাখতে হবে মহাপুরুষদের এই সব গল্পে অনেক সময় বানান কাহিনী বা রিউমার মেশান হয়। সেসব গল্প কিন্তু এড়িয়ে চলতে হবে। শুধু শুধু শিশুর মাথায় মিথ্যা একটা তথ্য ঢুকিয়ে লাভ কি। তাছাড়া যেহেতু চরিত্রটি বাস্তব কিন্তু ঘটনাটি মিথ্যা তাই শিশু পরে যখন তা জানবে এই চরিত্রটিকে সে আর বিশ্বাস করতে পারবে না অথবা সব গল্পকেই মিথ্যা ধরে নেবে। যেটা ক্ষতিকর হতে পারে।
বাচ্চারা যখন কোন কিছু শোনে বিশেষ করে নতুন কোন কিছু শোনে তাতে তাদের হাজারও শিশু সুলভ প্রশ্ন থাকে। শিশুদের উপযোগী যথার্থ গল্প সেগুলোই যেগুলোতে বাচ্চাদের মনে আসতে পারে এমন ছোট ছোট প্রশ্ন গুলোর উত্তর গল্পতেই দেয়া থাকে। ভাল প্রকাশনার ছোটদের বইগুলোতে এ মান রক্ষা করেই গল্প ছাপানো হয়। অথবা গল্পটা এমন ভাবে সাজানো হয় যাতে মূল বিষয় থেকে শিশুদের মন অন্য কোন দিকে ধাবিত না হয়। আসলে বাচ্চাদের উপযোগী গল্প তৈরি করা অত সহজ নয়। দক্ষ লেখক বা সম্পাদকরাই পারেন বুঝে শুনে কোন ঘটনাকে বাচ্চাদের উপযোগী গল্পের রুপ দিতে। বাজার থেকে বই কেনার সময় এ বিষয়টি বাবা মাকে খেয়াল রাখতে হবে। আর নিজেদের কোন গল্প বলতে চাইলে মনে মনে সাজিয়ে নিতে হবে গল্পটা। আর তৈরি রাখতে হবে এর থেকে বের হতে পারে এমন সব ছোট খাট প্রশ্নের শিশু উপযোগী উত্তর।
বড়দের উপন্যাসে, নাটক, সিনেমায় গল্পের প্রয়োজনে অনেক ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। অনেক করুণ অন্যায্য ঘটনার অবতারনা হয় যা দুর্ভাগ্যবশত আসলে আমাদের সমাজেরই অংশ। আমরা আমাদের সমাজে সব সময় ন্যায় বিচার কিংবা কোন ঘটনার সুন্দর পরিসমাপ্তি দেখতে পাই না। কিন্তু বাচ্চাদের গল্পে সব সময়ই সত্য এবং ন্যায় বিচারের জয় দেখাতে হবে। সমাজের কঠিন বাস্তবতা না হয় সে পরেই সময়মত জেনে নেবে কিন্তু শিশু মনকে নীতিবান করতে হলে তাদের যে গল্পগুলো বলে শোনানো হচ্ছে তাতে শুরুতে যাই থাকুক শেষমেষ সত্যের বিজয় এবং ন্যায় এর প্রতিষ্ঠা থাকতেই হবে।
শিশুদের গল্পের মূল চরিত্রকে হতে হবে নীতিবান। বিশেষ করে কাল্পনিক গল্পগুলোতে এ বিষয়টি বেশি খেয়াল রাখা উচিত। কারন গল্পের হিরো/হিরোইন সেই শিশুটির আইডল। সুতরাং এমন কোন দোষ তার চরিত্রে থাকা উচিত নয় যাতে শিশুটি তা গ্রহন করে ফেলে। এমন অনেক গল্প আছে যাতে প্রথমে হিরো/হিরোইনের মধ্যে কোন দুর্বলতা থাকে এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সে তার ভুল সুধরে সফলতা পায়। এমন হলে ঠিক আছে। মূল কথা গল্পের শুরুতে যাই থাকুক শেষমেষ গল্পের মূল চরিত্রের কোন নেগেটিভ দিক অক্ষুন্ন রেখে গল্প শেষ করা যাবে না।