পবিত্র মাহে রমজানে ইসলামি গল্পের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষার দেয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরছি নিয়মিত ভাবে। আজকে দ্বিতীয় পর্বে আলোচিত হবে, আল্লাহর মহীমা শিশুর সামনে তুলে ধরা এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শিক্ষা দেয়া।
আমরা আল্লাহর নেয়ামতের মধ্যে ডুবে আছি। মজার মজার খাবার, আলো- বাতাস সবই আমাদের প্রতিনিয়ত উপকার করে চলেছে। না চাইতেই ক্রমাগত আমরা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন থেকে শুরু করে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো পর্যন্ত সবই উপভোগ করে চলেছি। আল্লাহর এই ক্রমাগত মেহেরবানীর জন্যই তাঁকে “আর রাহমান” বলা হয়। শিশুদের আল্লাহর এই মহীমার কথা জানাতে হবে। দেখিয়ে দিতে হবে। আমি আগের পর্বে লিখেছিলাম আল্লাহর উপস্থিতি আমাদের চারপাশে এমন ভাবে বিদ্যমান যে, একটি সাধারন গল্পে, যেখানে ফুল পাখি লতা পাতা যত সাধারন কিছুই থাকুক না কেন তার থেকেও আল্লাহর মহীমা শিশুদের সামনে তুলে ধরা যায়।
এই মহাবিশ্ব, প্রানীকুল, প্রকৃতি-পরিবেশ এবং আমাদের নিজের দেহ সবই আল্লাহর মহান কারিগরি দক্ষতা প্রকাশ করে। তিনি শুধু সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এমনটি নয়। তিনি যথার্থ ডিজাইনে সব কিছু বানিয়েছেন এবং সবকিছুতে হারমনি ও রিদম দিয়েছেন। একই পাতা খেয়ে রেশম পোকা তৈরি করে রেশমি সুতা আর ছাগল তৈরি করে সাদা দুধ। শিশুদের সৃষ্টির এই অসাধারন বৈচিত্র দেখাতে না পারলে, শিক্ষা দিতে না পারলে শিশু সারা জীবন বোকাই থেকে যাবে। প্রতিটি প্রাণি, এইটুকু পিপড়া থেকে শুরু করে বিশাল হাতি, এমনকি মানুষেরাও আশ্চর্য এক অদৃশ্য সুতায় বাঁধা। প্রত্যেকে নির্ভরশীল একে অপরের উপর। ছোট্ট মাছের দুরন্তপনা থেকে তিমির সাগরের বুকে লাফিয়ে ওঠা, চন্দ্র সূর্য এবং তারকাদের অসীমতুল্য জগৎ সব কিছু গল্পে গল্পে শিশুদের শিক্ষা দিতে পারেন। সব সময় গল্পে কাহিনী থাকতে হবে তা কিন্তু নয়। সূর্য কিভাবে সকালে উঠে আর আমাদের যখন রাত তখন অন্যদেশে আলো দিতে চলে যায় এ কথাগুলোও গুছিয়ে গল্পের মত বলা যায়। শিশুকে বাড়ির ছাদে নিয়ে গিয়ে তারকার জগৎ দেখান। ওকে আকাশ দেখতে শেখান। তা না হলে শিশুর মেধার বিকাশ ঘটবে না। চারপাশের প্রাণিদের শ্রদ্ধা করতে শিখবে না। আর সব কিছুর স্রষ্টা আল্লাহর মহীমাও শিশু বুঝবে না। আল্লাহর সৃষ্টির আশ্চর্য জগৎ এর গল্প বা কথা শুনে শিশু যখন বিহমিত হবে, অবাক হয়ে যাবে তাকে তখন বলতে শেখান “সুবহানাল্লাহ” যার অর্থ হচ্ছে “সকল পবিত্রতা আল্লাহর”। এই অভ্যাসটি শিশুকে সর্বক্ষন আল্লাহর মহীমার কথা মনে করিয়ে দেবে।
আল্লাহ নিজেও আমাদের বার বার তাঁর মহীমা উপলব্ধি করার জন্য, তার সৃষ্টিকুলকে পর্যবেক্ষন করতে বলেছেন। যারা সেটা করতে পেরেছেন তারা আজ বড় বড় বিজ্ঞানি, লেখক, দার্শনিক হতে পেরেছেন। আর আমরা বাকিরা অন্ধ বোকাই রয়ে গেছি।
মহীমা দর্শণের পর আসে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ;
আল্লাহর ক্রমাগত মেহেরবানির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মানুষ হিসেবে আমাদের প্রধান কাজ। শিশুকে শৈশব থেকেই সে শিক্ষা দিতে হবে। ইসলামি বিধান গুলো নামায, রোজা ইত্যাদি সবই সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম। শিশুদের সবই শিখাতে হবে একে একে। তবে আজই একটি সহজ ছোট্ট বিষয় শুরু করতে পারেন। যে কোন নিয়ামত গ্রহনের পর বা উপকার লাভের পর শিশুদের আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা শেখান। খাবার খাওয়ার পর, অসুস্থ হলে সুস্থ হবার পর, চমৎকার কিছু উপহার পাবার পর এমনকি রোজকার হোমওয়ার্ক শেষ করবার পর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ “আলহামদুলিল্লাহ” বলা শেখান তাদের। সাথে এও বলে দিন এর মানে “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য” বা ওদের ভাষাতেও বলতে পারেন যে, এর মানে হল, আল্লাহকে থ্যাংক ইউ দেয়া। এই অভ্যাসটা শিশুরা যখন বড় হবে তখন তাদের অন্তরকে এমনভাবে মহিমান্বিত করবে যে তারা তখন আল্লাহর নিয়ামতগুলো প্রতিনিয়ত দেখতে পাবে আর তাদের অন্তর আপনা থেকেই কৃতজ্ঞতায় ভরে যাবে। শিশুকে যখন গল্প বলবেন তখন গল্পের চরিত্র যখন সফলতা লাভ করবে তখন সে বলবে “আলহামদুলিল্লাহ”। বইতে থাকুক না থাকুক আপনি বিষয়টি যুক্ত করুন। শিশু জানতে চাইবে কেন এক কথা বলল বা এ কথা মানে কি? তখনই আপনি বিষয়টি পুরোপুরি শিখিয়ে দিতে পারেন। শিশুর গল্পের প্রিয় চরিত্রটি যদি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয় তা হলে দেখবেন আপনাতেই শিশু আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শিখছে।
শিশুদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শিক্ষা দেয়া এখন আমাদের পৃথিবীতে খুবই প্রয়োজন। অকৃতজ্ঞ পৃথিবীতে নতুন প্রজন্ম যদি কৃতজ্ঞ চিত্ত নিয়ে আত্মপ্রকাশ না করে তাহলে ভবিষ্যত পৃথিবীতের মানবিক মূল্যবোধ বলে কিছুই থাকবে না। আমরা আমাদের স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই ভুলে গেছি। মানুষ আর প্রকৃতি পরিবেশ তো দূরের কথা। শিশুকে কৃতজ্ঞ একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাই প্রথম শিক্ষা দিতে হবে, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।