“আসসালামু আলাইকুম”। “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক”। চমৎকার এ দুআকে আমরা সালাম নামে চিনি। কারও সাথে সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম দেয়া ইসলামের একটি রীতি। সাক্ষাতে যখন আমরা কারও সাথে হাত মেলাই, অনেক সময় বুক মেলাই সেটা সম্পর্কের মধ্যে একটি সুন্দর হৃদ্যতা তৈরি করে। তার সাথে সাথে হাসি মুখে একটি সালাম অর্থাৎ তার জন্য শান্তির দুআ করার মাধ্যমে আমরা পরস্পরের অন্তর এবং জীবনকে ছুঁয়ে দিতে পারি। সালামের মাধ্যমে পরস্পরের শান্তির জন্য আল্লাহ তাআালার কাছে দুআ করা শুধু সাক্ষাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, ফোনে কথা বলার সময় বা ম্যাসেজে বা কোন বক্তব্য শুরু করার আগেও সালাম দেয়া যায়।
সালাম আদান প্রদানকে আল্লাহ খুবই পছন্দ করেন। সালাম দেয়া রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাত হলেও সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। আবার সালামের জবাবে একটু বাড়িয়ে দুআ করাটা আল্লহর কাছে অধিক পছন্দনিয়। অর্থাৎ “আসসালামু আলাইকুম” (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) এর উত্তর হবে, “ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” (আপনার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক) । আবার কেউ যদি সালাম দেয় “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” উত্তর হবে ”ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু” (আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)। সুতরাং সালামের মত এত মহান বিষটি আমাদের শিশুদের শিখাতে হবে।
আমাদের সমাজের একটি ভুল রীতি আছে যে, শুধু ছোটরাই বড়দের, কিংবা গরীবরা ধনীদের, ছাত্রছাত্রী বা কর্মচারিরা তাদের শিক্ষক বা মালিককে সালাম দেবে। ইসলামি শিক্ষা হল, সালাম সবাই সবাইকে দিতে পারে। ছোটরা বড়দের, বড়রা ছোটদের, ধনীরা গরীবদের, গরীবরা ধনীদের, সকল ভেদাভেদ ভুলে সবাই সবাইকে সালাম দিতে পারে। রাসুল (সাঃ) ছোটদেরও সালাম দিতেন। তার কাছে ধনী গরীব শিক্ষিত অশিক্ষিত এমন কোন ভেদাভেদ ছিল না। শিশুকে সেই শিক্ষাই দিতে হবে। কোন ভেদাভেদ ভুলে শিশু সবাইকে সালাম দিতে শিখলে তার মধ্যে অহংকার দানা বাঁধতে পারবে না। তার সাথে মানুষের সম্পর্কগুলো হবে সুন্দর এবং স্বচরিত্রের কারনে সে হবে সকলের আদরের পাত্র। আর লাভ করবে আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত। আপনার বাড়ির দারোয়ানকে, ঘরের কাজের লোককেও সালাম দেয়া শেখান আপনার শিশুকে। ভেদাভেদের পর্দা শৈশবেই খুলে যাক। অর্থ মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি নয়, এ শিক্ষা সালামের মাধ্যমেই হয়ে যাক। যে কেউ যে কাউকে আগে সালাম দিতে পারলেও বয়সে ছোটরা বড়দের আগে সালাম দেবে সেটা একটি সামাজিক রীতি। এ শিক্ষাও শিশুদের দিন যাতে সে এ রীতি পালনে একধাপ এগিয়ে থাকে।
আমরা অনেক সময় দেখি কারও সাথে দেখা হলে বাবা মা শিশুকে বার বার মনে করিয়ে দেন সালাম দেয়ার কথা। শিশুর সালামের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য এটা ভাল উদ্যোগ। গল্পের মাধ্যমেও সালামের কথাটা শিশুর মাথায় গেথে দেয়া যেতে পারে। ধরা যাক কোন গল্পে কোন চরিত্র কোন বাড়িতে গেল বা কারও সাথে দেখা হল, সে সাথে সাথে তাকে সালাম জানালো। হয়ত আপনার হাতের গল্পের বইতে সেই বিষয়টি নাও থাকতে পারে। অসুবিধা নেই, আপনি পড়ে শোনানোর সময় যোগ করুন না বিষয়টি। শিশু তখন বার বার তার প্রিয় চরিত্রকে ভেদাভেদ না করে সবাইকে সালাম দিতে দেখবে। এতে সালাম এর বিষয়টি তার মাথায় গেঁথে যাবে। শিশুকে গল্পের পাশাপাশি সালাম দেয়ার জন্য নিয়মিত উদ্ভুদ্ধ করুন। সে যেন সকল মানুষকে সালাম দেয়া শিখে। এই সালামের মাধ্যমে আল্লাহর সার্বক্ষনিক শান্তি, রহমত, বরকতের অংশিদার হওয়া যাবে। আল্লাহর প্রিয় পাত্র হওয়া যাবে। সাথে সাথে শিশু শিখবে সকলের মর্যাদা সমান এবং অহকার তার অন্তরে স্থান পাবে না।