আসসালামু আলাইকুম
রামজান মাস রহমতময় এবং বরকতময় একটি মাস। এই মাসে কম বেশি সকল মুসলমানই ইসলামের দিকে আরেকটু ঝুঁকবার চেষ্টা করেন। শিশুরা বাদ যাবে কেন? তাই এই রমজানকে সামনে রেখে শিশুদের আল্লাহ সম্পর্কে, ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দিতে পারেন। আর এই কাজটি সহজেই করতে পারেন ইসলামি গল্প বলার মাধ্যমে। আর ইসলামি শিক্ষার প্রথম ধাপ হল মহান আল্লাহর পরিচয়।
আল্লাহর সাথে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেয়া প্রত্যেক মুসলমান পিতামাতার প্রধান দায়িত্ব। যখন থেকে শিশু বুঝতে শিখবে তাকে আল্লাহর কথা, তাওহীদের কথা শিক্ষা দিতে হবে। ইসলামি দর্শনমতে শিশুদের অন্তরে জন্মগত ভাবে তাওহীদের বীজ বপন করাই থাকে। এটা আল্লাহই করে দেন। পিতামাতার দায়িত্ব শুধু পরিচর্যা করে সে বীজকে অংকুরিত করা এবং সময়ের সাথে সাথে শিক্ষাটি পরিপূর্ণ করা। আল্লাহর পরিচয় শিশুকে দেবার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে, তিনটি বিষয় একই সাথে শিক্ষা দিতে হবে, নইলে শিক্ষাটি অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।
১. আল্লাহ আমাদের তথা জগতের সকল কিছুরই সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা।
২. আল্লাহ এক ও তাঁর কোন অংশীদার নেই। এবং
৩. আল্লাহর দৃশ্যমান কোন ছবি কিংবা অবয়ব নেই।
এই শিক্ষাগুলো কিভাবে দেয়া যেতে পারে? আমি যেহেতু বার বার গল্পের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেবার কথা বলি তাই এখানেও সেই পন্থার কথাই বলছি, গল্প বলার মাধ্যমে শিশু অন্তরকে আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া সম্ভব। ইন্টারনেট ঘেটে অসংখ্য ইসলামি গল্প পেয়ে যাবেন। বাজারেও আছে অসংখ্য ছোটদের উপযোগী ইসলামি গল্পের বই। সৃষ্টির শুরুর গল্পগুলো এবং নবী ও রাসূলদের গল্পগুলো আল্লাহর সাথে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেবে চমৎকার ভাবে। বিভিন্ন গল্প বিভিন্ন ভাবে আল্লাহর মহীমা তুলে ধরবে এবং শিশুরা আল্লাহকে একটু একটু করে চিনবে। আল্লাহর উপস্থিতি প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে এমন ভাবে বিরাজমান যে একটা সাধারন গল্পের মধ্য দিয়েও আল্লাহর সাথে পরিচিত হতে পারে শিশু। যেমন কোন গল্পে সূর্যের কথা থাকতে পারে। শিশুরা যখন শিখবে সূর্য আমাদের আলো দেয়। তখন তাকে এও শিখাতে হবে যে, সূর্যমামাকে আল্লাহই এ দায়িত্ব দিয়েছেন আমাদের জন্য। সুতরাং সূর্যের এই উজ্জল আলোর কৃতিত্ব সূর্যের নয় বরং আল্লাহর। কোন গল্পের ছোট্ট মৌমাছিও আমাদের উপকার করার জন্য সার্বক্ষনিক কাজ করে চলেছে মহান আল্লাহর নির্দেশে। এভাবে গল্পে যতবার শিশু; পশু, পাখি, সাগর, গাছ, নদী ইত্যাদি যে কোন বাস্তব বস্তু বা প্রাণীর সাথে পরিচিত হবে, নিশ্চিত করতে হবে সে যেন সাথে সাথে পরিচিত হতে পারে তার স্রষ্টার সাথেও। আমরা অনেক সময় কাল্পনিক গল্প শিশুদের বলে থাকি। কাল্পনিক গল্পের সাথে আল্লাহর নাম জড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই সাবধানি হতে হবে। কারন যে বস্তু কাল্পনিক তার সাথে অহেতুক আল্লাহকে জড়ানোর প্রয়োজন নেই।
আল্লাহকে চিনবার সাথে সাথে শিশুকে এও শিক্ষা দিতে হবে যে, আল্লাহ এক এবং তাঁর কোন অংশিদার নেই। তাওহীদের এই বিষয়টি কিন্তু বেশ গভীর। মানব সমাজ বুঝে না বুঝে বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষকে বা কোন উপকারি বস্তুকে এমন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে যা অনেক সময় আল্লাহর সাথে অংশীদার করার মত গর্হিত কাজে পরিনত হয়ে যায়। কোন বিখ্যাত ব্যাক্তির কোন কাজ, কোন বিজ্ঞানির মহান কোন আবিষ্কারের গল্প গুলো যখন শিশুদের বলা হচ্ছে তখন যেন শিশু সেই ব্যাক্তিকে মানব জাতির ত্রান কর্তা মনে না করে ফেলে। শিশুকে সাথে সাথে বুঝিয়ে দিতে হবে যে সেই ব্যাক্তির বা বিজ্ঞানির বুদ্ধি এবং জীবন আল্লাহরই দান। সুতরাং পৃথিবীর আগের এখনকার বা পরের সকল জ্ঞান ও আবিষ্কারের প্রকৃত কৃতিত্ব আসলে কেবল মহান আল্লাহর। তিনিই নির্ধারিত সময়ে সেই বিজ্ঞানির মাধ্যমে চমৎকার এই আবিষ্কারটি পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন আমাদের উপকারের জন্য। শিশুকে বলতে হবে আল্লাহর সাহায্য নিয়ে একদিন তোমাকেও ওই মহান ব্যাক্তিদের মত হতে হবে।
আল্লাহর পরিচয় শিশুদের দেবার সময় অনেক ধরনের প্রশ্ন শিশু মনে আসতে পারে। যেগুলোর বেশিরভাগের উত্তরই হয়ত পরিপক্ক মস্তিস্ক না হলে কাউকে বোঝানো সম্ভব নয় তথাপিও সহজ করে শিশুদের বোঝাতে পারেন। শিশু প্রশ্ন করতে পারে, আল্লাহকে দেখা যায় না কেন? উত্তর দিতে পারেন, আমরা যখন আল্লাহর প্রতি যথাযথ ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। তাকে ঠিক মত থ্যাংক ইউ বলতে পারি (হয়ত শিশুরা এভাবে আরও ভাল বুঝবে)। তখন তাঁকে পাওয়া যায়। এই উত্তরের মজাটা হল তখন শিশু জানতে চাইবে “আল্লাহকে কিভাবে থ্যাংক ইউ দিব?” তখন আপনার ইসলামি বিধান যেমন নামাজ, রোজা, মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার ইত্যাদির কথা শিশুকে বলার পরিবেশ তৈরি হয়ে যাবে এবং সেও মনোযোগ দিয়ে শুনবে। আরেকটি ছোট্ট উদাহরন দিতে পারেন, তাকে তার ঘরে নিয়ে যেতে পারেন, সেখানে তার ব্যবহৃত অনেক জিনিস আছে। এগুলো কার? শিশুটি বলবে, আমার। তারমানে কেউ যদি এখানে আসে তোমাকে বাসায় না দেখলেও তোমার জিনিসগুলো দেখে বুঝতে পারবে তুমি এখানে থাক। তারমানে কাউকে না দেখলেই যে তার অস্তিত্ব নেই তা নয়। আমাদের চারপাশের হাজার জিনিস প্রমাণ করে আল্লাহ আছেন। (এই উদাহরনটি আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণে পরিপূর্ণ নয়, শুধু শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন) অনেক সময় কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে পরে বলব বলে গল্পের পরের অংশে চলে যান এবং নিজে পড়াশোনা করে সেই প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন ও শিশুকে জানান। আল্লাহকে নিয়ে শিশু মনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দেয়া যেতে পারে তা নিয়ে অন্য কোন লেখায় আমি বিস্তারিত বলার চেষ্টা করব।
আবার ফিরে আসি গল্পে। গল্পের মধ্য দিয়ে আল্লাহ এবং তাওহীদের বিষয়টিতো শিশুদের শিখিয়ে দিলেন কিন্তু একটু কঠিন হয়ে যেতে পারে আল্লাহর কোন ছবি কিংবা অবয়ব নেই এ শিক্ষা দেয়া। শিশু এমনকি বড়রাও অনেক সময় নিজের অজান্তেই আল্লাহর দৃশ্যমান কোন ছবি তৈরি করে ফেলে। এমনও হতে পারে শিশু আল্লাহর ছবি একে আপনার সামনে নিয়ে আসতে পারে। এতে ঘাবড়াবেন না। শিশুর উপর রাগ হবেন না। এ বিষয়টা কমন। শিশুদের শুধু বলে দিন, যে ছবিটা তুমি এঁকেছো বা মনে মনে কল্পনা করছ আল্লাহ একদমই তেমন নন। অন্যরকম। একেবারেই আলাদা। আর সাথে সাথে আল্লাহর কাছে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তি চান। শিশুকেও তা শিক্ষা দিন। আল্লাহর ছবি তৈরি করার কুমন্ত্রনা দেয়া শয়তানের অন্যতম একটি চক্রান্ত। শয়তান সফল ভাবে বিভিন্ন কায়দায় আল্লাহর প্রতিকৃতি মানুষকে দিয়েই তৈরি করিয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে। শিশু সে চক্রান্তের জালের সহজ শিকার হতে পারে। তাই আগে থেকে শিশুকে আল্লাহর নিরাকার স্বত্ত্বার বিষয়টি শিক্ষা দিতে না পারলে সে ভুলের মধ্যে পড়ে যাবে।
শিশুদের জন্য যে সকল ইসলামি গল্প বাজারে বা ইন্টারনেটে পাওয়া যায় সেগুলো চমৎকার ভাবে আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম। আমরা অতি আধুনিক হবার অন্ধ অজুহাতে সে সব গল্প ছেড়ে হাবিজাবি গল্প শিশুদের শোনাই। রমজান মাস ইসলামি গল্পগুলো বলবারও একটি উপযুক্ত সময়। প্রাথমিক ভাবে এ দায়িত্ব বাবা মায়েরই। এরপর বড় ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক কেউই এ দায়িত্বের বাইরে নন। ইসলামি গল্প গুলোতে বিভিন্ন সময় শয়তানের কথাও আসবে। শয়তান আমাদের প্রধান এবং সবচেয়ে বড় শত্রু। এ গুরুত্বপূর্ন শিক্ষাটিও গল্প থেকে শিশুরা পেয়ে যাবে। আপনার বাচ্চাকে স্মার্টফোন চালানো শেখানোর আগে, এ বি সি ডি শেখানোর আগে আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। শিশুর প্রথম শিক্ষা হোক “আল্লাহ আমাদের এবং সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা” এবং এর জন্য শিশুকে কোন স্কুলে ভর্তি করাতে হবে না। আপনি নিজেই আল্লাহর কথা বলুন। গল্পের মত করে তাকে শোনান তাওহীদের কথা। শিশু আল্লাহকে প্রকৃত ভাবে না চিনলে জগতের সকল জ্ঞান তাকে দিলেও তার কোন লাভ হবে না। আল্লাহকে সঠিকভাবে চেনা বা বোঝা একদিনের কাজ নয়। সময়ের সাথে শিশু আল্লাহকে একটু একটু করে চিনবে, বুঝবে। আপনার দায়িত্ব শুধু শুরুটা করে দেয়া।