রমজানের পবিত্র দিনগুলোতে শিশুদের গল্পের মাধ্যমে ইসলামি শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি নিয়মিত ভাবে। আজ থাকছে ৩য় পর্ব।
আগের পর্বে শিশুদের আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের, শিক্ষা দেবার কথা বলেছিলাম । আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শুধু “আলহামদুলিল্লাহ” বলা নয়। নামায, রোজা, হজ, যাকাতের মত ইসলামি বিধান গুলো মেনে চলা এবং মানুষের ভাল করা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই মাধ্যম। মিথ্যা না বলা ইসলামের অন্যতম বড় শিক্ষা, মানুষের ক্ষতি না করা, মানুষকে কষ্ট না দেয়া ইত্যাদির মত ইসলামি বিধানগুলো শিশুদের ছোট থেকেই শিক্ষা দিতে হবে।
ইসলামি গল্পের মধ্যে একটি বড় অংশ জুড়ে আছে নবী রাসূল গনের গল্প, সাহাবী এবং আল্লাহরপ্রিয় বান্দা গনের গল্প । তাঁরা তাদের জীবনভর চমৎকার ভাবে ইসলামি বিধান গুলো মেনে চলেছেন। তাদের গল্প বলার সময় আপনি শিশুদের ইসলামি বিধান গুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবেন সহজেই। একটি উদাহরন দেয়া যায়, নবীগনের মধ্যে হযরত দাউদ (আঃ) অন্যতম। কিশোর বয়সে নবী দাউদ (আঃ) ভয়ংকর শক্তিশালি শত্রু রাজা জালুতকে পরাজিত করে রাজত্ব ও রাজকন্যা লাভ করেছিলেন। রূপকথার মত শুনতে তাঁর গল্পতে সাহসিকতা, দৃঢ়তা, সততা ইত্যাদির সাথে পাবেন নবী দাউদ (আঃ) এর পরহেজগারিতা। তিনি এত চমৎকার ভাবে যবুর (দাউদ (আঃ) এর উপর অবতীর্ণ কিতাব) তিলওয়াত করতেন যে, তার তিলওয়াত মাছেরা- পাখিরা পর্যন্ত মনেোযোগ দিয়ে শুনত। শিশু বিমহিত হবে এ কথা শুনে। যবুর কি জানতে চাইবে। তখন তাকে বলবেন, যবুর আল্লাহর পাঠানো একটি কিতাব বা বই। কুরআন হল আমাদের কাছে পাঠানো আল্লাহর কিতাব এবং যবুরের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। শিশুকে নিয়ে কুরআন তিলওয়াত করতে বসবেন নিয়মিত। তাকে অনুপ্রানিত করবেন তোমাকেও নবী দাউদ (আঃ) এর মত তিলওয়াত করা শিখতে হবে। এতে শিশুর মধ্যে কুরআন তিলওয়াতের আগ্রহ জন্মাবে।
দাউদ (আঃ) প্রচুর নামায পড়তেন। শুনে শিশুর আগ্রহ জন্মাবে নামাযে। তাকে নামাযের বিধান গুলো আস্তে আস্তে শিখিয় দিন। দাউদ (আঃ) প্রচুর রোযাও রাখতেন। শুনে শিশু জানলো রোযা সম্পর্কে। এভাবে প্রত্যেক নবী রাসূল এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাগুন আমাদের জন্য অনুকরনীয়, অনুসরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তাদের গল্পগুলো গুছিয়ে বলতে পারলে তারা হয়ে উঠবে শিশুদের আইডল বা হিরো। আর শিশুরা স্বভাবতই তাদের হিরোদের পছন্দ করে এবং অনুসরন করে। সকল নবীগন যদি হিরো হন তাহলে সুপার হিরো হলেন আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) তার জীবনের ঘটনা গুলো, তার চরিত্র শিশুর সামনে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতে হবে। এই একজন মানুষকে অনুসরন করলে শিশু নিজেও সুপার হিরোতে পরিনত হবে।
বর্তমান শিশুরা সুপারম্যান, স্পাইডারম্যানদের মত হিরোদের কেন অনুসরন করতে চায়। তারা তো পুরোপুরি কাল্পনিক। কারন তাদের গল্প গুলো মিডিয়া বিভিন্ন ভাবে শিশুদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। শিশুরা তাদের জন্য পাগল। এ উদাহরনই প্রমাণ করে গল্প, কমিকস, কার্টুণ ইত্যাদি শিশুদের প্রভাবিত করতে কতটা শক্তিশালি ভুমিকা রাখে। সুতরাং আসলেই যিনি অনুসরনীয় তার গল্প নয় কেন?
শুধু নবী রাসূলদের গল্প থেকে যে শিশু ইসলাম শিখবে তা কিন্ত নয়। ভাল লেখকদের শিশুদের উপযোগী কাল্পনিক গল্পও শিশুদের সত্য ও ন্যায় শিক্ষা দিতে পারে।
শিশুদের উপযোগী গল্পগুলোতে সত্যের জয় এবং মিথ্যার পরাজয় দেখাতেই হবে। থাকতে হবে ন্যায়ের জয়। তা না হলে শিশু সত্য ও ন্যায় শিখবে না। নবী রাসূল ও সাহাবীগন এবং এমন সৎ মানুষদের গল্পগুলো বা অন্য কোন গল্প যখন শিশুদের বলবেন তখন সেই মানুষদের সত্যবাদিতা, ন্যায় পরায়নতা, মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার ইত্যাদির কথা জোর দিয়ে শিশুদের বলুন।
ধরুন একদিন আপনার শিশু কোন মিথ্যা বলে ফেলল; তখন আপনি আপনার বলা কোন গল্পের উদাহরন টেনে ওকে বুঝিয়ে দিতে পারেন যে মিথ্যা বলায় কি হয়েছিল সেই গল্পে। শিশু সেই গল্পের কথা মনে করে মিথ্যা বলার ক্ষতিটা বুঝতে পারবে। তার কোন প্রিয় চরিত্র কোন গল্পে ভাল কাজ করলো। মানুষের উপকার করল; এটা যদি শিশু মনে রাখে। তাহলে তাকেও তেমন কোন ভাল কাজ করার ক্ষেত্রে অনুপ্রানিত করতে পারবেন সেই চরিত্রে কথা বলে। হাজার বার বলে শিশুকে যে কথা শিখাতে পারবেন না সে কথা গল্প বলে শিশুর মাথায় ঢুকিয়ে দিতে পারবেন সহজে।
আল্লাহ নিজেই গল্পের মাধ্যমে তার বান্দাদের মানে আমাদের বিভিন্ন শিক্ষা দিয়েছেন কুরআনে। অর্থাৎ তিনি এ বিষয়টি পছন্দ করেন। গল্প বলে শিশুদের প্রকৃত মানুষ হবার শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর এই পছন্দের কাজটি আপনিও করতে পারেন। তবে পাশাপাশি মনে রাখবেন শিশুর হাতের কাছে সবচেয়ে বড় অনুকরনের মানুষ কিন্তু তার বাবা মা। সুতরাং ইসলামি বিধান অনুসরন করা, সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকা মানুষের ভাল করা এ শিক্ষা শুধু গল্পে গল্পে দিলেই চলবে না। আপনাদেরও অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।