কিভাবে একটি সাধারন গল্পও হয়ে উঠতে পারে ইসলামি শিক্ষার মাধ্যম।

Shape Image One
কিভাবে একটি সাধারন গল্পও হয়ে উঠতে পারে ইসলামি শিক্ষার মাধ্যম।

ইসলামি গল্প বলতে আমরা সাধারনত নবী রাসূল গনের কাহিনী কিংবা আল্লাহর কোন প্রিয় বান্দার ঘটনা বুঝে থাকি। বিষয়টাকে এভাবে চিন্তা না করে আরোও বৃহৎ পরিসরে চিন্তা করা উচিত। ইসলাম হল পরিপূর্ণ জীবন বিধান তাই জীবনের এমন কোন ঘটনা নেই যেখানে ইসলামি ভাবধারা যুক্ত করা যায় না। সব সময় সব পরিস্থিতির জন্য ইসলামিক রীতি ও অনুশাসন বিদ্যমান। সেই আলোকে চিন্তা করলে আমরা যে গল্পগুলোকে ইসলামি গল্প মনে করি না, যেমন হয়ত রাজা রানীর রুপকথার গল্প, পশু পাখির গল্প এমনকি আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া কোন গল্প, সেসব গল্পের মধ্য দিয়েও শিশুদের ইসলামি শিক্ষা দেয়া যেতে পারে। এ কাজটি অনেক ভাবেই করা যায়। এখানে অন্যতম ৫ টি পয়েন্ট আলোচনা করা হল

. গল্পে কুফরি বা শিরকের কোন স্থান থাকতে পারবে না।

প্রথমে কেমন গল্প পরিহার করতে হবে তা বলি। আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বিকার করে এমন কোন বিষয় বা আল্লাহর সাথে অংশীদার করে এমন কোন বিষয় গল্পে থাকা চলবে না। আল্লাহ সম্পর্কে ভূল শিক্ষা নেবে এমন কোন গল্প তা যত ছোটই হোক, যত মজারই হোক বা যত শিক্ষনীয়ই মনে হোক তা একেবারেই বাদ দিয়ে দিতে হবে। তবে এমন অনেক গল্প হতে পারে যেখানে আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দেয়ার জন্যই কুফরি বা শিরকের অবতারনা করা হচ্ছে এবং শেষমেষ বিষয়টিকে শিশুর সামনে পরিষ্কার করা হচ্ছে, তা হলে ঠিক আছে। মোটকথা গল্পের শেষ পর্যন্ত আল্লাহ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ভুল শিক্ষার অস্তিত্ব থাকতে পারবে না। থাকলে তেমন গল্প আমরা বাদ দেব।

২. নতুন প্রানী বা বস্তু সম্পর্কে শিশু জানলে তার সাথে আল্লাহর মহীমা যোগ করুন

গল্পের মাধ্যমে শিশু পৃথিবী ও মাহাবিশ্বের বিচিত্র জগৎ সম্পর্কে জানতে পারে। কোন একটি গল্পে হয়ত সে নতুন কোন প্রানী সম্পর্কে জানল। যেমন সে হয়ত বিশাল তিমি মাছ সম্পর্কে জানল, অথবা সে হয়ত সাদা মরু ভাল্লুক সম্পর্কে জানল অবার সে হয়ত হিমালয় পর্বত সম্পর্কে জানল অথবা মহাকাশের ধুমকেতু সম্পর্কে জানল। এত সব বিচিত্র সৃষ্টি সম্পর্কে যখন গল্পে বলা হয় আপনি শিশুকে এসবের স্রষ্টা আল্লহর মহীমা সম্পর্কে বলুন। কত ক্ষমতাবান তিনি, যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন তা বলুন। আল্লাহ নিজেও তার সকল বিচিত্র সৃষ্টি পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে আল্লাহর মহীমা খোঁজার কথা বলেছেন। শিশুদের গল্পে হয়ত সেভাবে লিখা হয় না। কিন্তু আপনি যোগ করতে পারেন। এতে শিশু সার্বক্ষনিক আল্লাহর স্মরণের শিক্ষা লাভ করবে।

৩. ইসলামি আদবগুলো গল্পের মাধ্যমে সহজেই শিশুদের শেখানো যায়।

মনে করুন কোন গল্পে একটি শিশু আরেকটি শিশুর বাড়িতে গেল। তাদের দেখা হল তারা খেলতে শুরু করল। এই অতি সাধারন ঘটনাতে যদি যোগ করা যায়, শিশুটি অপর শিশুর সাথে দেখা হবার সাথে সাথে তাকে সালাম দিল “আসসালামু আলাইকুম” অপর শিশুটি উত্তর দিল “ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” এরপর তারা খেলতে শুরু করল। আবার হয়ত একপর্যায়ে একটি শিশু কোন খাবার খেল আর বলল “আলহামদুলিল্লাহ”। এভাবে অতি সাধারন ঘটনার মধ্যেও ছোট ছোট ইসলামি আদবগুলো শিশুদের শেখানোর সুযোগ থাকে। এভাবে অবস্থা ভেদে গল্পের মধ্যে ইসলামি আদবগুলো তুলে ধরতে পারলে তারা সহজে শিক্ষাটা পাবে।

৪. ইসলামি বিধানগুলোর কথাও গল্পে যোগ করতে পারেন।

গল্পের মধ্যে ইসালামি বিধানগুলোও ঘটনাভেদে যুক্ত করা যায়। যেমন হয়ত গল্পে কোন ব্যাক্তি জাহাজে করে কোন এডভেঞ্চারে যাচ্ছে। এমন সময় ঝড় উঠল। অনেকক্ষন ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করার পর সে নিরাপদে ঝড় অকিক্রম করল। গল্পটায় ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করার পরিবর্তে বলা যায়, ঝড়ের সম্মুক্ষিন হবার পর ব্যাক্তিটি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করে সাহায্য চাইল কারন সে জানত আল্লাহর ক্ষমতার কাছে এ ঝড় কিছুই না। সে তার সাহস ও শক্তি বাড়িয়ে দেয়ার জন্য দুআ করল। তারপর ভয় না পেয়ে ঠান্ডামাথায় জাহাজকে পরিচালনা করতে লাগল। এরপর আল্লাহর রহমতে ঝড় থেমে গেল। আর তার জাহাজ ও নাবিকদের কোন ক্ষতিই হল না। ঝড় থেমে যাবার পর সে আল্লাহর কাছে ২ রাকাত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সালাত আদায় করল এবং এডভেঞ্চার চালিয়ে গেল।

৫. মানুষ এবং সকল সৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা ও মমতা প্রকাশ করা।

মানুষ এবং সৃষ্টির সকল জীবের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও মমতা প্রকাশ ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। আল্লাহ মানুষের বড় বড় সব পাপই নিমেষেই ক্ষমা করে দেন, ক্ষমা চাইলে। কিন্তু কোন মানুষকে কষ্ট দিলে আর সেই মানুষটি ক্ষমা না করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন না। এমনকি কোন প্রানি বা কোন গাছের সাথে বিনা কারনে খারাপ আচরন করলেও আল্লাহ রুষ্ট হন। কোন একটি গল্পে মানুষকে ধন্যবাদ দেয়া, ভুল করে ফেললে ক্ষমা চেয়ে নেয়া। ভুলটা ঠিক করে দেয়া, পশু-পাখি, গাছ পালারা আমাদের কত উপকার করে এসব গল্প বলে প্রকৃতি পরিবেশের উপর শিশুদের ভাল মনোভাব বৃদ্ধি করা পক্ষান্তরে ইসলামি শিক্ষারই অংশ। যে কোন গল্পে একটি ছোট মৌমাছির কথা আসল। শিশুদের তখন বলতে পারনে তারা কিভাবে কষ্ট করে আমাদের জন্য মধু যোগাড় করে আর মধু আমাদের কত উপকারে আসে। এই কথাগুলো গল্প বলার সময় যোগ করে মৌমাছির প্রতি শিশুর মমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

আমরা কথা বলছিলাম গল্পে গল্পে ইসলামি শিক্ষা দেবার ব্যপারে। বাজারে হয়ত এমন গল্পের বই পাওয়া দুষ্কর যেখানে কোন সাধারন গল্পে এসব যোগ করে ইসলামি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। কাজটি হয়ত আপনাকেই করতে হবে একটু বুদ্ধি করে। সন্তানকে ইসলামি শিক্ষাটুকু সহজে দেয়ার জন্য এইটুকু কি আপনি করতে পারবেন না?