এক.
ইসলামে দুয়া একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসি মুসলমানগন একে অপরের জন্য দুআ করে থাকেন। একে অপরের কাছে দুআ চাওয়া মুসলমানদের একটি অনন্য রীতি। বাবা মায়েরা সব সময়ই সন্তানের জন্য দুআ করে থাকেন। নেক সন্তানও বাবা মায়ের জন্য সব সময় দুআ করে থাকেন। বাবা মা এবং সন্তানদের এই পরস্পরের জন্য দুআ করা খুবই ফজীলতপূর্ন বিষয়।
নেক সন্তান লাভের জন্য কিংবা নেক সন্তান গড়ে তোলার জন্য বাবা মাকে সব সময় আল্লাহর কাছে দুআ করতে হবে। বাবা মায়ের তাদের সন্তান আগমনের আগ থেকেই দুয়া করা শুরু করা উচিত। পবিত্র কুরআনে নবী যাকারিয়া (আঃ) সন্তান হবার আগেই নেক সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করেছেন এ উদাহরন আছে। যা আমাদের জন্য একটি শিক্ষা।
এছাড়াও সহীহ মুসলিম শরীফের হাদিসে রাসূল (সাঃ) সন্তান হবার আগেই আল্লাহর কাছে সন্তানের জন্য কিভাবে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার দুআ করা যায় তার উল্লেখ আছে।
সুতরাং সন্তান হবার আগে থেকেই দুয়া করা শুরু করতে হবে প্রত্যেক বাবা মাকে। যদিও কোন দম্পতিকে সন্তান দান করবেন কিনা সেটা সম্পূর্ন আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে কিন্তু তবুও সন্তান প্রত্যাশি যে কোন পিতামাতাকে তার অনাগত সন্তান বা সন্তানদের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করতে হবে। আর সন্তান জন্ম নেবার পর থেকে বাবা মা যতদিন বেঁচে থাকেন তার সন্তান যেন একজন সৎ এবং পরহেজগার মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে তার জন্য দুআ করতে হবে। বাব মা যদিও কখনও সন্তানের জন্য দুআ করতে ভুল করেন না এটা ঠিক। কিন্ত আধুনিকতার নামে আমরা ইসলামের ফরজ বিধান গুলো থেকেই এত দূরে চলে গেছি যে দুয়া করা তো দূরেরই কথা। রমজান মাসের এই দুয়া কবুল হবার সময়ে এ অভ্যাসটি আমরা গড়ে তুলতে পারি। আমরা আমাদের বর্তমান এবং অনাগত সন্তানের জন্য দুআ করতে পারি। সে যেন তওহীদের বিশ্বাসি, একজন সৎ ও পরহেজগার মানুষ হয়।
সন্তানকেও দুআ করা শিখাতে হবে। আল্লাহর কাছে না চাইলেও আল্লাহ মনের কথা বুঝতে পারেন সত্যি কিন্তু আল্লাহর কাছে হাত তুলে চাইবার মাধ্যমে শিশুর মন আল্লাহর প্রতি আরও বিগলিত হয় এবং বিনয়ী হয়। সন্তানকে সাথে নিয়ে তাকে দুআ করতে শেখান। তাকে বলুন তার নিজের জন্য, তার বাবা মা এবং সকল আত্মীয় স্বজনদের জন্য সর্বপরি সমগ্র বিশ্বের জন্য দুআ করতে। এ অভ্যাস তার পিতামাতার মৃত্যুর পরও যথাযথ ভাবে রয়ে গেলে পিতামাতার জন্য বিরাট নাজাতের রাস্তা তৈরি হয়ে যাবে।
দুই.
বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়। তাদের কোন আদেশ বা উপদেশ দেবার আগে বাবা মাকে সেই কর্মটি নিজেকেই নিয়মিত করে দেখাতে হবে। প্রতিটি সন্তান যখন ছোট থাকে তখন বাবা মাই থাকে তার জন্য রোল মডেল। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই রোল মডেল যা করবে বাচ্চারাও সেটাই করবে। তাই বাবা মা যদি এমন কাজ তার সন্তানকে করতে বলে যেটি সে নিজেই করে না, সন্তান থেকে সেই কাজটি আশা করা খুবই কঠিন হবে। আমাদের রাসূল (সাঃ) কখনই এমন উপদেশ কাউকে দিতেন না যেটি তিনি নিজে মেনে চলতেন না। রাসূল (সাঃ) প্রিয় কন্যা ফাতেমা (রাঃ)ও তাঁর সন্তানদের অর্থাৎ হাসান (রাঃ) ও হোসেন (রাঃ) কে যে উপদেশ বা আদেশ দিতেন তা তিনি নিজে সবসময় বাস্তবায়ন করতেন।
আপনি আপনার সন্তানকে নিয়মিত নামায পড়তে বলেন কিন্তু নিজেই নিয়মিত নামায পড়েন না তাহলে সেই সন্তানের কাছ থেকে নিয়মিত নামায আশা করতে পারবেন না। আপনি বাচ্চার কুরআন শিক্ষা ও পড়বার অভ্যাস গড়তে পারবেন না যদি না শিশু দেখে যে আপনিও কুরআন পড়ছেন। আপনি গরীব দুঃখিকে সাহায্য করছেন, আপনার পিতামাতার (শিশুর দাদা-দাদি, নানা-নানির) সাথে সদ্ব্যবহার করছেন এ বিষয়গুলো শিশুকে আলাদা করে শিক্ষা দেবার প্রয়োজন হবে না যদি কিনা শিশু আপনাকে নিয়মিত এ কাজটি করতে দেখে।
আরেকটি কথা যোগ করতে চাই। এখনকার সময়ের স্টাইল হয়ে গেছে যে বেশি রাত করে শুতে যাওয়া। যেটা বাচ্চাদের জন্য মোটেও ভাল না। আপনি সন্তানকে জোর করে ঘুম পাড়িয়ে দিতে চাইছেন রাত বাড়ার আগেই কিন্তু নিজে জেগে থাকছেন বেশি রাত অবদি। এই প্রক্রিয়ায় সন্তানকে সময়মত ঘুমাতে যাওয়া শেখানো সম্ভব হবে না। বরং সময়মত নিজেই সন্তানকে নিয়ে ঘুমাতে গিয়ে আবার ফজর নামাযের সময় নিজে উঠুন এবং সন্তানকে উঠতে শেখান। নামায পড়াও হল এবং সারা জীবনের জন্য সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার এই অসাধারন অভ্যাসটিও তার হয়ে গেল। আর আপনার বাচ্চারও কান্নাকাটি করে চোখ ঘষতে ঘষতে রোজ স্কুলে যেতে হল না। সাথে আপনি নিজেও লাভবান হলেন। কারন আমরা বরাবরই জানি সময়মত ঘুমোতে যাওয়া আর সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা দেহ মন উভয়ের জন্যই উপকারি।
এমনই ভাবে যে বাবা মা নিজেরাই সারাক্ষন স্মার্ট ফোন হাতে নিয়ে সময় কাটায় সে কিভাবে তার সন্তানকে স্মার্ট ফোন আসক্তি থেকে মুক্ত করতে পারবে তা একটি বিরাট প্রশ্ন। এমন হাজারটা উদাহরন আছে যেগুলো আমরা করি না কিংবা করি আর নিজের সন্তানদের তার উল্টোটা করতে বলি এবং সফলকাম না হয়ে হতাশাগ্রস্থ হই। মূলমন্ত্র একটাই সন্তানকে যা করতে বলছেন বা করতে মানা করছেন তা নিয়মিত ভাবে নিজে পালন করে সন্তানের সামনে রোল মডেল হয়ে উঠুন। দুজনেই উপকৃত হবেন।