শিশুর অন্তরে ইসলামি শিক্ষার বীজ বপন করা হতে পারে পিতামাতার ধৈর্যের পরীক্ষা

Shape Image One
শিশুর অন্তরে ইসলামি শিক্ষার বীজ বপন করা হতে পারে পিতামাতার ধৈর্যের পরীক্ষা

সন্তানরা অনেক সময় বাবা মায়ের জন্য ধৈর্যের পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। আপনি যদি আপনার পরিবারকে নিয়ে দীনের পথের পথিক হতে চান তাহলে শয়তান নানান ফন্দি ফিকিরের মাধ্যমে আপনাকে পথভ্রস্ট করার চেষ্টা করবে এবং সন্তান লালন পালনে শয়তান সবচেয়ে বেশি যে জায়গাতে আঘাত হানে তা হল বাবা মায়ের ধৈর্যচ্যুতি ঘটানো। এর ফলে বাবা মা সন্তানকে সঠিক শিক্ষা বিশেষত ইসলামি শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে হাল ছেড়ে দেন। নিয়তি এমন যে এখনকার নষ্ট পৃথিবী ইসলামি শিক্ষাকে পশ্চাতপদ শিক্ষা বলে প্রমাণ করতে চাইছে বার বার। আপনিও সেই প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছেন। নিজের জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে শিশুর অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না, কিংবা অনেক কিছুর ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না। ফলে নিজেও ভুলের মধ্যে পড়ছেন এবং পরবর্তী প্রজন্মকেও ভুল শিক্ষা দিচ্ছেন কিংবা হাল ছেড়ে দিচ্ছেন শিশুকে ইসলামি শিক্ষা দেবার ব্যপারে।

ইসলামি শিক্ষার একটি মহান দিক হল, ইসলামের মূল বিষয়গুলো যারা পরিষ্কার ভাবে বুঝে নিয়েছেন বা শিখে নিয়েছেন তারা ইসলামি জটিল বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা অনুসন্ধান বা অনুধাবন করতে পারেন সহজেই। তাই মূল ইসলামি শিক্ষাটাই আসল। তাওহীদ এবং ঈমানের মূল বিষয়গুলো বোধগম্য হলে বাকি সব জ্ঞান তা ইহকালের হোক বা পরকালের হোক অর্জন করা সহজ হয়ে যায়। ইসলামের মূল বিষয়গুলো কিন্তু আপনারও শিখতে হবে। এতদিন হয়ত যে কোন কারনে শিখে নেয়া হয় নি। এখন শিখুন। নিজের জন্য, সন্তানের জন্য। ব্যস্ততার কারনে সময় বের করতে পারছেন না? একটু করুন। কষ্ট হচ্ছে? ধৈর্য ধরুন। আহামরি কঠিন কোন কাজ নয় এটি। এখন বই আর ইন্টারনেট এ কনটেন্ট এর অভাব নেই। শুধু প্রযোজন ধৈর্য ধরে শিখে নেয়া। একটা সময় হয়ত আপনার জ্ঞানের ভান্ডার শেষ হয়ে যাবে। সন্তান আরও শিখতে চাইবে। তখন সে নিজেই সঠিক পথ খুজে নিতে পারবে। কারন আপনি বীজটি বপন করে দিয়েছেন এবং সেটাই জরুরী।

সন্তানরা অনেক বিষয় বার বার বলার পরও মেনে নেবে না কারন প্রতিকূল পৃথিবী তার বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু তাতেও ধৈর্যচ্যুত হওয়া যাবে না। সন্তানরা আপনার কাছে সত্য গোপন করতে পারে ছলনা করতে পারে আপনি ধরে ফেললেও এমন কোন কাজ করে ফেলা যাবে না যাতে আপনার সন্তানদের থেকে আপনার মধ্যে একটি স্থায়ী দূরত্ব তৈরি হয়। বুদ্ধি করে ধৈর্যের সাথে সন্তানদের ধীরে ধীরে সেই ভুল পথ থেকে সরিয়ে আনতে হবে।

বাবা হিসেবে অসাধারন ধৈর্যের নমুনা হলেন ইয়াকুব (আঃ)। তার আদরের সন্তান ইউসুফ (আঃ) কে তার ভাইয়েরা কুপে ফেলে দিয়ে হিংস্র জন্তু খেয়ে ফেলেছে বলে মিথ্যা গল্প সাজিয়ে ইয়াকুব (আঃ) এর কাছে পেশ করেছিল। ইয়াকুব (আঃ) তারা মিথ্যা বলছে বুঝতে পেরেও আল্লাহর আদেশে ধৈর্য ধারন করেন। তা না হলে তার বাকি পরিবারও তখনই লন্ড ভন্ড হয়ে যেত।

পরবর্তীতে অনেকগুন প্রতিদান সহ তিনি তার প্রিয় সন্তান ইউসুফ (আঃ) কে ফিরে পান এবং শেষমেষ সকলেই আল্লাহর মার্জনা লাভ করেন। বাবা মায়ের সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে ধৈর্যের সাথে তাকে সৎ পরামর্শ দেয়া এবং যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত করার দায়িত্ব কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। অনেক সময় শিশু একবারে কোন কথা মেনে নেবে আবার অনেক সময় বারবার তকে বোঝাতে হবে। হাল ছেড়ে দিয়ে শিশুকে নিজের মত বেড়ে উঠতে দিলে বিপত্তি ঘটতে পারে।

শিশুকে সময় দেবার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ব্যস্ততার অজুহাতে পিতামাতা দুজনেই শিশু সন্তান থেকে দূরে থাকছেন এখনকার সময়ে। সারা দিন পরিশ্রম করে আবার বাচ্চাকে সময় দেয়া আসলেই কঠিন কাজ কিন্তু এখানেও ধৈর্যের সাথে কষ্টটা সহ্য করতে না পারলে শিশুর বিকাশে বিপত্তি ঘটবে। শিশুর ধর্মীয় শিক্ষা থেকে শুরু করে নৈতিক বিকাশ, মেধার বিকাশ পড়াশোনা সব কিছুর দিকে সতর্ক নজর বাবা মাকেই রাখতে হবে। যত দক্ষ লোকের হাতেই শিশুকে ছেড়ে দেন না কেন বাবা মায়ের চেয়ে বেশি যত্নবান বা সতর্ক কেউই হয় না।